বাংলাদেশের প্রখ্যাত আলেম, ইসলামি চিন্তাবিদ ও গবেষক মুফতি নোমান কাশেমি। আল মারকাযুল হানাফী বাংলাদেশ-এর পরিচালক এই আলেম বর্তমানে নিউইয়র্কে বসবাস করছেন। প্রতিবেশী কারা, তাদের প্রতি আমাদের দায়িত্ব, অমুসলিম প্রতিবেশির প্রতি ভূমিকা- এমন নানা বিষয়ে কথা বলেছেন চ্যানেল ৭৮৬-এর সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন- সাইদ রহমান
প্রতিবেশী কারা?
দুই ধরনের মানুষ আমাদের প্রতিবেশী। এক. যারা আমাদের আত্মীয়। দুই. আত্মীয় না হলেও যারা আমাদের আশপাশে বসবাস করেন। আশপাশে বলতে কী বোঝানো হচ্ছে, তা নিয়ে বিভিন্ন ব্যাখ্যা আছে। ইমাম জুহরি (র.) বলেছিলেন, কোনো মানুষের ঘরের সামনে-পেছনে, ডান-বামের ৪০ ঘর বা বাড়ি পর্যন্ত সবাই ওই ব্যক্তির প্রতিবেশী।
প্রতিবেশীর হক কি?
প্রতিবেশীর মূল হক হলো- তার সঙ্গে অবশ্যই সুন্দর আচরণ করতে হবে। হাদিসে স্পষ্ট ঘোষণা দেয়া হয়েছে, প্রতিবেশীর সঙ্গে যিনি খারাপ আচরণ করেন তিনি মুমিন নন। রাসূল (সা.) বলেছেন, আল্লাহর কসম! সেই ব্যক্তি মুমিন নয়, যার প্রতিবেশি তার অনিষ্ট (ক্ষতি-শত্রুতা) থেকে নিরাপদ নয়। এ থেকে আমরা বুঝতে পারি, বিষয়টা কতটা গুরুত্বপূর্ণ। আসলে প্রতিবেশীর সঙ্গে উত্তম আচরণ করা ঈমানের মৌলিক দিকগুলোর অন্যতম একটি।
প্রতিবেশীর প্রতি আমাদের কী দায়িত্ব?
যদি কোনো প্রতিবেশী অভাবের মধ্যে থাকে তাহলে তাকে সামর্থ্য অনুযায়ী সাহায্য করতে হবে। খাদ্যের সংকট থাকলে যতদূর সম্ভব তার বা তাদের খাবারের ব্যবস্থা করতে হবে। যদি হতাশাগ্রস্ত হয়, তাহলে তাকে মানসিকভাবে শক্ত থাকার জন্য বুদ্ধি-পরামর্শ দিয়ে সাহায্য করতে হবে। এক কথায়, প্রতিবেশীর সুখে দুঃখে তার পাশে থাকা আমাদের সকলের জন্য অবশ্য কর্তব্য।
প্রতিবেশী যদি অমুসলিম হয়, তাহলে কী করণীয়?
ওপরের প্রশ্নগুলোর উত্তরে যা যা বলেছি, তার সবই একজন অমুসলিম প্রতিবেশীরও প্রাপ্য। এক্ষেত্রে মুসলিম-অমুসলিম ভাগ করা যাবে না। অমুসলিম প্রতিবেশীর সঙ্গেও উত্তম আচরণ করতে হবে। বরং আচরণের ব্যাপারে আমরা অধিকতর সতর্ক থাকবো, যখন একজন অমুসলিম প্রতিবেশীর সঙ্গে ওঠাবসা করছি। কারণ ইসলাম যে উদার একটা ধর্ম সেটা আমার আচরণ দিয়েই তাকে বোঝাতে হবে।
শহরে তো আজকাল প্রতিবেশী বলে কিছু নেই...
ঠিক বলেছেন। শহুরে সভ্যতা আমাদেরকে মারাত্মকভাবে ব্যক্তিকেন্দ্রিক করে তুলেছে। এটা এতটাই যে, অনেক সময় দীর্ঘ কয়েক বছর পাশাপাশি ফ্ল্যাটে বসবাস করার পরও কেউ কাউকে চেনে না। প্রতিবেশী তো দূরের কথা, তাদের একজনের সঙ্গে আরেকজনের পরিচয়ই হয়নি। এখান থেকে আমাদেরকে বেরিয়ে আসতে হবে। প্রতিবেশীহীন পৃথিবী আমাদের কারও জন্য মঙ্গলজনক নয়।
প্রতিবেশীর হক সম্পর্কে কোরআনে কী বলা হয়েছে?
সূরা নিসার ৩৬ নং আয়াতে বলা হয়েছে, ‘তোমরা আল্লাহর ইবাদত করো। কোনো কিছুকে তার সঙ্গে শরিক কোরো না এবং পিতামাতা, আত্মীয়-স্বজন, এতিম, অভাবগ্রস্ত, নিকট-প্রতিবেশী, দূর-প্রতিবেশী, সঙ্গী-সাথী, মুসাফির ও তোমাদের দাস-দাসীর সঙ্গে ভালো ব্যবহার কর। নিশ্চয় আল্লাহ দাম্ভিক এবং অহংকারীকে পছন্দ করেন না।’ অত্যন্ত সুস্পষ্টভাবেই এখানে প্রতিবেশী শব্দটি উল্লেখ করা হয়েছে। সুতরাং তাদের সঙ্গে ভালো আচরণ করা অবশ্য কর্তব্য।
এ ব্যাপারে হাদিসে কী নির্দেশনা দেয়া হয়েছে?
হাদিসে প্রতিবেশীর প্রতি সম্মান ও সদাচরণকে ঈমানের অনুষঙ্গ সাব্যস্ত করেছে। হজরত আবু শুরাইহ (রা.) বলেন, ‘আমার দুই কান শ্রবণ করেছে, আমার দুই চক্ষু প্রত্যক্ষ করেছে, যখন রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর প্রতি ঈমান রাখে এবং আখেরাতে বিশ্বাস রাখে সে যেন স্বীয় প্রতিবেশীকে সম্মান করে।’ (বুখারি : ৬০১৮)।