সার্জেন্ট এরশাদ সিদ্দিকী
নিউইয়র্কে বাংলাদেশিদের হতাহতের মিছিল ক্রমেই লম্বা হচ্ছে। সর্বশেষ ম্যানহাটানের রাস্তায় মারাত্মক সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হয়ে না ফেরার দেশে চলে গেলেন অনুভব খান মুন্না বরকত। সিটির রাস্তায় এসব সড়ক দুর্ঘটনার কারণ কী, কীভাবে তা এড়ানো যায়- এমন নানা প্রশ্ন নিয়ে চ্যানেল ৭৮৬ মুখোমুখি হয়েছে নিউইয়র্ক পুলিশে কর্মরত সার্জেন্ট এরশাদ সিদ্দিকীর। সঙ্গে ছিলেন- সাইদ রহমান
বাংলাদেশি বরকতের মর্মন্তুদ মৃত্যু নিয়ে কী বলবেন?
কীই-বা আর বলার আছে! খুবই হৃদয়বিদারক আর মর্মান্তিক ঘটনা। ভিনদেশে উপার্জনের জন্য এসে এভাবে প্রাণহানি ঘটা দুঃখজনক। ভিডিওটি আমি দেখেছি। প্রথমে মনে হয়েছিল, সে ডানদিকে যেতে চায়, পরে মনে হচ্ছিল বাঁ দিকে। সম্ভবত একটা দ্বিধাদ্বন্দ্বে ছিল সে। এমন সময় গাড়িটা তাকে চাপা দিয়ে চলে যায়।
এটাকে ইচ্ছাকৃত কিংবা হেইট ক্রাইম বলার অবকাশ আছে?
আমার মনে হয় না। যতটুকু দেখেছি, তাতে এটাকে একটা দুর্ঘটনাই বলতে চাই। এখানে হেইট ক্রাইমের কিছু নেই। তবে মাইক্রোটি অস্বাভাবিক গতিতে ছুটছিল। যতদূর জানা গেছে, কোনো একটি কারণে ধাওয়া খেয়ে পালাচ্ছিল ওই গাড়িটি।
এসব দুর্ঘটনা প্রায়ই ঘটছে। কীভাবে এড়ানো যাবে?
দুর্ঘটনা এড়াতে একটাই কথা- রুলস অ্যান্ড রেগুলেশনস মানতে হবে। আইনের তো কোনো অভাব নেই। সেগুলো না মানলে এসব দুর্ঘটনা থামবে না। যেমন সিটির অনেক রাস্তায় এখন আলাদা বাইক লেন আছে। কেউ যদি বাইক নিয়ে তার নির্দিষ্ট লেনে না থাকে, তাহলে তো মুশকিল। রাস্তার কোন পাশে থাকতে হবে, তা জনতে হবে এবং মানতে হবে।
অতিরিক্ত গতি থাকার কারণে দুর্ঘটনাগুলো আরও ভয়াবহ হয়ে ওঠে। এর কোনো রুলস নেই?
অবশ্যই আছে। এটা ঠিক যে, দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে স্পিড একটা বড় ইস্যু। রাস্তাগুলোতে মিটার বসানো আছে, নির্ধারিত গতির ওপরে তুললেই আপনাকে অটোমেটিক্যালি চিহ্নিত করা হবে। এরপর একটি টিকিট দেওয়া হবে। সেটা নিয়ে আপনি কোর্টে যাবেন, তারা আপনার অপরাধ বিবেচনা করে রায় দেবে।
বাংলাদেশিদের অ্যাওয়ারনেস করার ক্ষেত্রে আপনারা কী করছেন?
সারা বছরই এজন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়। কমিউনিটির বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আমরা যখন যাই, তখনই এ ব্যাপারে কথা বলি। সোশ্যাল মিডিয়ায় বিভিন্ন সতর্কতামূলক বার্তা তুলে ধরা হয়। কমিউনিটি লিডার যারা আছে, তাদের কাছেও আমরা বার্তা পৌঁছে দিয়ে থাকি। কিন্তু দুঃখজনক হলো, বাংলাদেশি কমিউনিটির মধ্যে ল অ্যান্ড অর্ডার মানার প্রবণতা কম। আমি নিজে সেই কমিউনিটির অংশ হওয়া স্বত্তে¡ও এমন মন্তব্য করতে আমার কোনো দ্বিধা নেই।
বাংলাদেশি কমিউনিটির আইন না মানার এই প্রবণতা কেন?
আসলে বাংলাদেশের পরিস্থিতি আর এখানকার পরিস্থিতি তো সম্পূর্ণ ভিন্ন। বাংলাদেশে নিয়ম না মানাটাই অনেক ক্ষেত্রে নিয়মে পরিণত হয়। এখানে নিয়মকে অত্যন্ত কঠিনভাবে প্রয়োগ করা হয়ে থাকে। বাংলাদেশ থেকে যখন কেউ এখানে আসেন, তখন হয়তো এই কঠিন নিয়মে এডজাস্ট করতে পারেন না। তাই তিনি নিয়ম ভাঙতে থাকেন।
এক্ষেত্রে আপনারা তো কমিউনিটি লিডার কিংবা ইলেকটেড অফিশিয়ালদের সাহায্য নিতে পারেন...
ঠিক উল্টো ঘটনাটাই ঘটে। আমরা তো তাদের সাহায্য নিতে চাই, কিন্তু অনেক সময় বাংলাদেশিদের আইন না মানার পেছনে মূল দায় থাকে কমিউনিটির ইলেকটেড অফিসিয়ালদের। মাইনর অপরাধের ক্ষেত্রে কাউকে আটক করা হলে তারা এসে, ‘ও গরীব, বুঝতে পারেনি’- এমন নানা কথা বলে ছাড়িয়ে নিয়ে যায়। এখানে বাংলাদেশের মতো রাস্তার পাশে অস্বাস্থ্যকর খাবার বিক্রি নিষিদ্ধ। কিন্তু অনেক বাংলাদেশিই তা করছেন। আটক করা হলে তদবির করার জন্য চলে আসে অনেকে।
বাইডেন সরকারের আমলে সিটির আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নতি হয়েছে?
আমার তা মনে হয় না। বরং আমি মনে করি, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। প্রায় সময় সহিংসতার ঘটনা ঘটছে। হেইট ক্রাইমও কমছে না। তবে, আশার কথা হলো- বাইডেন প্রশাসন পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাতে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এগুলোর ইমপ্লিমেনটেশন একটা ভালো ফলাফল দেখা যেতে পারে।
নিউইয়র্কসহ সারা দেশে পুলিশের বিরুদ্ধে বলপ্রয়োগের অভিযোগ উঠছে, এ ব্যাপারে কী বলবেন?
আমি এমন অভিযোগের কোনো ভিত্তি খুঁজে পাই না। দেখুন, আইন তৈরি করে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব তথা জনগণের প্রতিনিধিরা। সেই আইনের বাস্তবায়ন করে আদালত। মানে আমি বলতে চাইছি, যে কোনো অপরাধের ক্ষেত্রে শাস্তির রায়টা কিন্তু আদালতই দেয়। আমরা যারা পুলিশ কিংবা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, তারা শুধু ওই আইন বাস্তবায়নে সাহায্য করে থাকি, এর বেশি কিছু নয়। একজন পুলিশ সদস্যের যদি চারিত্রিক স্খলন ঘটে, তাহলে তার জন্য সবাইকে দায়ী করা ঠিক হবে না।
আপনার নিজের ব্যাপারে কিছু তথ্য জানতে চাই...
আমার জন্ম এবং বেড়ে ওঠা বাংলাদেশের চট্টগ্রামে। ১৯৯৫ সালে ১৪ বছর বয়সে ইউএসএ-তে চলে আসি। পড়াশোনার মূল সময়টা এখানেই কেটেছে। তারপর ২০০৩ সালে যোগদান করি এনওয়াইপিডিতে। বর্তমানে বসবাস করছি নিউইয়র্কের ইস্ট এলমহার্স্টে।