যত দিন যাচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি কমিউনিটির পরিধি ততই বাড়ছে। সঙ্গত কারণেই বাড়ছে তাদের ট্যাক্স ও ইমিগ্রেশন সংক্রান্ত জটিলতা বাড়ছে। চ্যানেল ৭৮৬ এর সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে সেসব বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন সার্টিফাইড ট্যাক্স প্রফেশনাল আকরামুল হক।
আপনাদের প্রতিষ্ঠানের যাত্রা কবে এবং কার্যক্রম কী কী?
আমাদের কমিউনিটি ট্যাক্স সার্ভিস ও ইমিগ্রেশনের যাত্রা শুরু হয় ২০১৬ সালে। মূলত আমাদের কমিউনিটির লোকজনকে সহায়তা করার এর যাত্রা শুরু হয়। গত প্রায় ৮ বছর ধরে কমিউনিটিকে সেবা দিয়ে যাচ্ছি। ট্যাক্সের কাজটা আমাদের মূল কাজ। পাশাপাশি ইমিগ্রেশন ইস্যুতে নানাভাবে পরমার্শ এবং সহায়তা দিয়ে থাকি। যাদেরকে সেবা দিয়ে থাকি, তাদের অধিকাংশই আমাদের বাংলাদেশি।
পরবর্তী ট্যাক্স প্ল্যান নিয়ে কীভাবে সবাই প্রস্তুতি নিতে পারে?
আমরা এখন জুলাই মাসে চলে এসেছি। নেক্সট ট্যাক্স ইয়ার খুবই সন্নিকটে। এ ব্যাপারে প্রস্তুতি নেওয়ার এটাই ভালো সময়। আমাদের দীর্ঘ অভিজ্ঞতায় আমরা দেখেছি, আমাদের কমিউনিটির লোকজন ট্যাক্স দিতে এসে শেষ তাড়াহুড়ো করে এবং ঝামেলায় পড়ে। তখন আমরাও তাদেরকে ভালোভাবে সেবা দিতে পারি না। আমার ক্লায়েন্টদের উদ্দেশে আমি বলতে চাই, আপনারা সারা বছর ধরেই ট্যাক্সের জন্য প্রিপারেশন নেবেন, যাতে বছর ঝামেলা পোহাতে না হয়।
ট্যাক্স দিতে এসে কমিউনিটির লোকজন কোন ঝামেলায় সবচেয়ে বেশি পতিত হয়?
আমাদের কমিউনিটির একটা বড় অংশ আছেন সেল্ফ এমপ্লয়ী। তারা উবার, লিফট কিংবা ইয়োলো ক্যাব চালান। ট্যাক্স ফাইল রেডি করতে আসলে দেখা যায়, তাদের কাছে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট থাকে না। তাই কমিউনিটির ভাইদের প্রতি আমার একটা রিকোয়েস্ট থাকবে, যত কাগজপত্র আছে, আপনারা সেগুলো যত্ন করে সংরক্ষণ করবেন। প্রয়োজনে নোটবুক তৈরি করে সমস্ত আয়-ব্যয় লিখে রাখেবেন। রিসিপ্টগুলো রেখে দেবেন। এরপর বছর শেষে একটা চার্টৈ তৈরি করে ট্যাক্স প্রফেশনালের কাছে গেছে দুই পক্ষের জন্য কাজটা সোজা হবে।
ট্যাক্স ফাইলে সঠিক তথ্য না থাকলে কী সমস্যা হতে পারে?
আইআরএস বর্তমানে অডিটের সংখ্যা বৃদ্ধি করেছে। কেউ যদি ট্যাক্স ফাইলে সঠিক তথ্য প্রদান না করে তাহলে অডিটের মুখোমুখি হতে পারে। ট্যাক্স ফাইলে অসত্য তথ্য দিয়েছেন, সেটা প্রমাণ হলে কঠোর শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে।
অনেক ইনকামের ক্ষেত্রে ডকুমেন্ট থাকে না, সেক্ষেত্রে কী হবে?
ডকুমেন্ট থাকবে না, এই দেশে সাধারণত এমন কোনো ইনকাম নাই বললেই চলে। অনেকেই বলেন, আমরা অনলাইনে পে করি। সেখানে টাকা পে করার পর অনলাইন থেকেই একটা স্লিপ তুলে নেওয়া যায়। স্লিপটা নিজের কাছে যত্ন করে রেখে দিতে হবে। আমাদের কাছে এমন কিছু ক্লায়েন্ট আসে, যারা বাইক দিয়ে খাবার কিংবা অন্যান্য পণ্য ডেলিভারির কাজটি করেন। তারা কাস্টমারের কাছ থেকে পাওয়া রিসিভ কপিটা সঙ্গে রাখেন না। আমার পরামর্শ হবে, রিসিভ কপিগুলো যত্ন করে রাখে দিন। ট্যাক্স ফাইল রেডি করার ক্ষেত্রে এটাই আপনার ডকুমেন্ট।
কোনোভাবেই ডকুমেন্ট উদ্ধার করা না গেলে সেক্ষেত্রে কী হবে?
ইনকাম করলে খরচও আছে। এই দেশে একটা ব্যবসা করতে গেলে মেনটেইন্যান্স খরচ প্রচুর হয়। সমস্যাটা হলো, এই খরচের সিংহভাগই হয় ক্যাশ টাকায়। ফলে অনেকেই এগুলোর ডকুমেন্ট রাখেন না। এখন নিয়মটা হলো, যতটুকুর ডকুমেন্ট আছে, ততটুকুর হিসাব হয়। এই নিয়মানুযায়ী দেখা গেল, প্রচুর টাকা খরচ হয়ে গেলেও টাকাটা ধরেই সরকারকে ট্যাক্স দিতে হয়। তাই যে কোনো খরচের ব্যাপারেই ডকুমেন্ট রাখতে হবে।
চাইল্ড সাপোর্ট কী?
ব্যাপারটা এখনও ইউএস কংগ্রেসে আছে। চাইল্ড সাপোর্ট ব্যাপারটা ছিল শুধু প্যান্ডেমিকের ১ বছরের জন্য। ৬ বছরের শিশুদের জন্য মাসে ৩০০ ডলার করে আর যারা ৬ থেকে ১৬ বছরের মধ্যে তাদের জন্য ২৫০ ডলার করে দেওয়া হতো। এখন কংগ্রেসম্যানরা চাচ্ছে, এটাকে পার্মানেন্ট করার জন্য। তবে আগে ১৬ বছর পর্যন্ত হলেও এবার ১৭ বছর পর্যন্ত করার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। এটা আসলে এখনও আলোচনার পর্যায়ে। আশা করা যায়, এটা পাস হয়ে যাবে।
পাস হয়ে গেলে শিশুর অভিভাবকরা এটা কীভাবে পাবে?
এটার জন্য আলাদা করে আবেদন করার কোনো প্রয়োজন নেই। আইআরএস নিজেই নথি খুঁজে বের করে টাকাটা পাঠিয়ে দেবে। তবে টাকাটা মাসে মাসে উত্তোলন করবেন নাকি বছর শেষে সেটা নির্ভর করে ওই অভিভাবকের ওপর। এই পুরো বিষয়টা নিয়ে আমাদের কাছে আসার কোনো প্রয়োজন নেই।
অনেকেই পরিবারের সদস্যদের এদেশে আনতে গিয়ে নানা জটিলতায় পড়েন। এ ব্যাপারে পরামর্শ কী হবে?
A4 ক্যাটাগরি, যেটা হলো ভাইবোনের জন্য এপ্লিকেশন, স্বামী-স্ত্রীর জন্য কিংবা বাচ্চাদের জন্য এপ্লিকেশন। ইউএস ইমিগ্রিশনে এমনিতেই এটা ব্যাকলগ হিসেবে রয়েছে। প্যান্ডেমিকের কারণে পরিস্থিতি হয়েছে আরও খারাপ। ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাস একটা সুপার ফ্রাইডে করে অনেকগুলো ইন্টারভিউ নেয়। তারাও চেষ্টা করে যাচ্ছে ব্যাকলগটাকে কমানোর জন্য। এটুকু বলা যায়, খুব তাড়াতাড়ি এই সংকট কাটবে না। এক্ষেত্রে ইউএস সিটিজেন যেসব স্বামী-স্ত্রী আছেন তারা চাইলে ইনকয়ারি পাঠাতে পারেন। সেক্ষেত্রে অনেক সময় সেটা কিছুটা তরান্বিত হয়। সবমিলিয়ে বলা যায়, ধৈর্য ধরতে হবে। এর আশায় জমিজামা সব বিক্রি করে দিয়ে বসে থাকার কোনো বুদ্ধিমানের কাজ হবে না।
আপনাদের প্রতিষ্ঠানের সফলতা কতটুকু?
এর উত্তর ক্লায়েন্টরাই ভালো দিতে পারবেন। প্রতিদিন আমার সঙ্গে বাংলাদেশি কমিউনিটির অনেকের কথা হয়। ট্যাক্স এবং ইমিগ্রেশন ইস্যুতে মানুষকে সহায়তা করাটা শুধু আমাদের পেশা নয়, এটা একটা সেবাও। আমরা আমাদের সর্বোচ্চটা দিয়ে মানুষের জন্য ভালো কিছু করার চেষ্টা করি। হয়তো সবসময় সফল হই না, কিন্তু চেষ্টার ব্যাপারে আমাদের শতভাগ নিষ্ঠা রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে আমাদের কমিউনিটিকে আরও গ্রো করতে হবে। যে যার অবস্থান থেকেই এই চেষ্টা করতে হবে। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন।
নিউইয়র্কে বাড়িভাড়া বাড়ছে। এর সঙ্গে ট্যাক্স কতটুকু সম্পর্কযুক্ত হবে?
ট্যাক্সের মধ্যে এর প্রভাব পড়বে না খুব একটা। তবে নিউইয়র্ক সিটি ডিপার্টমেন্ট বিভিন্ন সময় কিছু ট্যাক্স আরোপ করে থাকে, সেখান থেকে কিছু অংশ কমানো সম্ভব হতে পারে। এই অতিরিক্ত রেন্টের সঙ্গে আসলে ট্যাক্সের খুব একটা সম্পর্ক নেই।