যুক্তরাষ্ট্র নামক দেশটি নিয়ে মানুষের আগ্রহের শেষ নেই। কীভাবে এই দেশটি এতটা সমৃদ্ধি অর্জন করলো, কেন সারা পৃথিবীর ওপর তার এতটা প্রভাব, এর স্বাধীনতার পটভূমি কী—এমন নানা প্রশ্নের জ্ঞানগর্ভ উত্তর দিয়ে মানুষের সেই আগ্রহের কিছুটা হলেও পূরণ করেছেন কবি, লেখক ও গবেষক কাজী জহিরুল ইসলাম।
যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতা দিবসের পটভূমি কী?
বহু বছর ধরেই আমেরিকা হচ্ছে পৃথিবীর সর্ববৃহৎ অর্থনৈতিক শক্তি। যে কারণে পৃথিবীর সব প্রান্তের মানুষেরেই এই দেশটি সম্পর্কে জানার আগ্রহ থাকে। একটা সময় ছিলো, যখন প্রায় পুরো পৃথিবী দখল করে রেখেছিল বৃটিশরা। আমেরিকাও ছিলো তাদের অধীনস্থ। আমেরিকার ১৩টি স্টেটে তারা পাকাপোক্ত আসন গাড়ে। অন্যগুলোতেও তাদের দূর্বল দখলদারিত্ব কায়েম করা ছিলো। এক পর্যায়ে আমেরিকানরা যুক্তরাজ্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। এই যুদ্ধের পর ১৭৭৬ সালের ৪ জুলাই আমেরিকানরা জয়লাভ করে এবং এই দিনই যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রটা প্রকাশ করা হয়।
মার্কিনীদের নিজেদের মধ্যে গৃহযুদ্ধ হয়েছিল দীর্ঘদিন ধরে, সেটার কারণ কী?
যুক্তরাজ্য থেকে স্বাধীন হয় বটে কিন্তু এরপর আমেরিকাকে আরও বড় পরীক্ষা দিতে হয়েছে। দাসপ্রথা থাকবে কি-থাকবে না, এ নিয়ে দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়ে দেশটির মানুষ। ১১টা স্টেট মনে করে, দাসপ্রথা থাকতে হবে কিন্তু বাকিরা ছিলো এর বিরুদ্ধে। এমনকি দাসপ্রথার পক্ষের ১১টা স্টেট কনফেডারেট স্টেট অব আমেরিকা নামে নতুন একটি দেশ গঠন করে ফেলে। আব্রাহাম লিংকনের নেতৃত্বে বাকি স্টেটগুলো হয়ে গেল আলাদা। শুরু হয় এই দুই পক্ষের মধ্যে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ। লক্ষ লক্ষ মানুষ মারা যায়। যুদ্ধে জয়লাভ করে দাসপ্রথার বিরোধীরা। তারা তাদের সঙ্গে ওই ১১টি স্টেটকে সংযুক্ত করে। এরপর আমেরিকাকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি।
যুক্তরাষ্ট্রের মানুষ আসলে কতটা স্বাধীন?
এটা আসলে দুটি পার্সফেকটিভ থেকে দেখতে হবে। একটি হলো রাষ্ট্রীয় আরেকটি ব্যক্তিগত। রাষ্ট্রীয়ভাবে আমেরিকানরা পুরোপুরি স্বাধীন। আমেরিকার আইনগুলো মানুষকে কথা বলার পূর্ণ স্বাধীনতা নেয়। তারা চাইলে রাষ্ট্রপ্রধানের বিরুদ্ধেও যে কোনো সময় যে কোনো অভিযোগ তুলতে পারেন, সমালোচনা করতে পারেন। অন্যদিকে জর্জ ফ্লয়েডের কথাই ধরুন। এই পুলিশ সদস্য একজন কৃষ্ণাঙ্গ মানুষকে নির্মম হত্যা করেছে। এটা করার জন্য রাষ্ট্র কিন্তু তাকে বলে দেয়নি। সে নিজ থেকেই এটা করেছে। যুক্তরাষ্ট্রে ইদানীং বন্দুক হামলার ঘটনা ঘটছে খুব বেশি। এগুলো তো রাষ্ট্র বলে দেয়নি। মানুষ তাদের ফ্রিডমের সুযোগ দিয়ে কান্ডগুলো ঘটিয়েছে। এসব চিন্তা করলে আমেরিকা পুরোপুরি স্বাধীন কেন, তা নিয়ে তর্ক হতে পারে। তবে এই দেশে সকল ধর্ম-বর্ণের মানুষ স্বাধীনভাবে বসবাস করতে পারে, অর্থাৎ রাষ্ট্রীয়ভাবে এখানকার মানুষ পুরোপুরি স্বাধীন।
যুক্তরাষ্ট্রে গোলাগুলির ঘটনা বাড়ছে, এ ব্যাপারে আপনার পর্যবেক্ষণ কি?
গোলাগুলির ঘটনাগুলো যারা ঘটাচ্ছে, তারা গুলি করে নিরপরাধ মানুষগুলো মেরে ফেলছে। যাদেরকে মারছে, তারা তাদেরকে জীবনেও দেখেনি। কোনো শত্রুতা নেই। কোনো কারণ নেই, জাস্ট এমনিতেই গুলি করে মেরে ফেলা হচ্ছে। আমার পর্যবেক্ষণ হলো, এই লোকগুলো মানসিক বিকারগ্রস্ত। যুক্তরাষ্ট্রে এমন বিকারগ্রস্ত মানুষের অভাব নেই। তবে এখানে ঘৃণাজনিত কিছু কারণও আছে, কিন্তু মূল বিষয়টা পাগলামি ছাড়া আর কিছুই নয়।
এসব গোলাগুলি বন্ধ করার উপায় কী?
পৃথিবীর অনেক দেশের মতো যার-তার হাতে অস্ত্র থাকাটা নিষিদ্ধ করতে হবে। নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে অস্ত্র থাকতে পারে, লাইসেন্সের মাধ্যমে নির্দিষ্ট ব্যক্তির হাতে অস্ত্র যেতে পারে, কিন্তু ঢালাওভাবে সবার হাতে অস্ত্র তুলে দেওয়ার পরিণতি ভয়াবহ, যেটা এখন টের পাচ্ছে আমেরিকা। তাই এ ব্যাপারে কঠোর আইন করা দরকার।