সম্প্রতি উদযাপিত হয়ে গেল যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতা দিবস। এই দিবসকে ঘিরে আলোচনায় উঠে এসেছে দেশটির সংবিধান, আইনের শাসন, বিচার ব্যবস্থাসহ নানা দিক। বাদ যায়নি একের পর এক বন্দুক হামলার ইস্যুও। চ্যানেল ৭৮৬-কে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এসব নিয়ে খোলামেলা কথা বলেছেন কমিউনিটি অ্যাক্টিভিস্ট, আইটি স্পেশালিস্ট সাঈদ এম আলম।
কীভাবে স্বাধীন হলো যুক্তরাষ্ট্র?
সারা পৃথিবীতে এক সময় আমরা ব্রিটিশ কলোনাইজেশন দেখেছি। আমাদের ভারতবর্ষও প্রায় ২০০ বছর তাদের পদানত ছিলো। অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ডসহ ইউরোপের দেশগুলোও ব্রিটিশদের অধীনে ছিলো। পদানত ছিলো যুক্তরাষ্ট্রও। নানা ঘটনা প্রবাহের মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র স্বাধীন হয়েছে ১৭৭৬ সালে। তবে ১৮৭০ সাল থেকে প্রত্যেকটি ফেডারেল স্টেটে ৪ জুলাইকে সরকারি ছুটি হিসেবে পালন করা হয় এবং বিভিন্নভাবে দিনটিকে উদযাপন করা হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান নিয়ে জানতে চাই।
যুক্তরাষ্ট্রের জাতির পিতা যারা, তারা খুবই বিচক্ষণ ছিলেন। তারা শুধু দেশ স্বাধীন করেই ক্ষান্ত হননি, জাতিকে একটি সংবিধান উপহার দিয়েছেন। সেই সংবিধানে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র হবে এমন একটি রাষ্ট্র, যেখানে ধনী-গরিব নির্বিশেষে সকল বর্ণ ও গোষ্ঠির মানুষ নিরাপদে থাকবে। রাষ্ট্র প্রত্যেকটি মানুষের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করবে। যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান এতটাই শক্তিশালী যে, ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতো লোকও কিন্তু সেই কনস্টিটিউশনের কাছে হার মানতে বাধ্য হয়েছেন এবং মানবতার জয় হয়েছে। আমি মনে করি, আমেরিকার কাছে আমাদের অনেক কিছু শেখার আছে।
যুক্তরাষ্ট্রকে বলা হয় কল্যাণ রাষ্ট্র, এটা কতটুকু সঠিক?
পবিত্র কোরআনসহ প্রত্যেকটি ধর্মগ্রন্থে একটা কথা বলা হয়েছে—স্রষ্ঠার রাজ্য। তো, স্রষ্টার রাজ্য তো সেটাই হবে, যেখানে সব মানুষ সমান, যেখানে সব মানুষের নিরাপত্তার ব্যবস্থা রয়েছে। দেখুন, সুইডেনে বাকস্বাধীনতার নামে আমাদের প্রাণের চেয়ে প্রিয় গ্রন্থ, আমাদের জীবন বিধান পবিত্র কোরআনকে অবমাননা করা হয়েছে। আমি এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ঘটনাটির তীব্র প্রতিবাদ ও ঘৃণা জানাচ্ছি। এটা বাক স্বাধীনতা নয়। আপনি যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান দেখেন, এখানে কোনোভাবে কোরআনকে অবমাননা করা হয়নি।
যুক্তরাষ্ট্রে মানুষের ধর্মীয় স্বাধীনতা কতটুকু?
নিউইয়র্কের যে এলাকাটায় আমি থাকি, সেই এলাকায় অন্তত ১০টি মসজিদ আছে। সেখানে গিয়ে আমরা নামাজ-কালাম পড়ি, ইবাদত করি। যুক্তরাষ্ট্রের মতো একটা জায়গায় এবার ঈদুল আজহার এত জামাত হয়েছে, যেটা না দেখলে কল্পনা করাও মুশকিল। মসজিদ তো বটেই, খোলা মাঠে লক্ষ লক্ষ লোক এসব জামাতে অংশ নিয়েছেন। এখানকার অনেক সিনেটর, অফিসিয়ালরা এসে মুসল্লিদের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেছেন। এ জন্যই যুক্তরাষ্ট্রকে বলা হয় বহু ধর্ম-বর্ণের মানুষ।
যুক্তরাষ্ট্রে নাগরিক অধিকার পরিস্থিতি…
এই রাষ্ট্র তার সকল নাগরিককে সমান চোখে দেখে। রাষ্ট্র প্রত্যেকের অধিকারকে নিশ্চিত করে। ধনী-গরীব সবার জন্য একটা মাত্র শাসন। সেই রাষ্ট্র কখনো উন্নতি করতে পারে না, যতক্ষণ সেখানে ধনীর জন্য এক শাসন থাকে আর গরীবের জন্য থাকে আরেক শাসন। অন্তত এদিক থেকে যুক্তরাষ্ট্র হলো গড প্রোমিজ ল্যান্ড, কারণ এখানে মানুষের অধিকারকে অত্যন্ত সম্মানের চোখে দেখা হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বহির্বিশ্বে সাহায্য-সহযোগিতা…
কোভিডের সেই ভয়ানক পরিস্থিতিতে আমরা যখন কোথাও ভ্যাকসিন পাচ্ছিলাম না, তখন যুক্তরাষ্ট্র আমাদেরকে (বাংলাদেশকে) ৮ কোটি ভ্যাকসিন দিয়েছে। মিলিয়নস অব ডলার সাহায্য করেছে। এ ছাড়া নানাভাবে আগেও তারা আমাদের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে, এখনও দিচ্ছে। আশাকরি ভবিষ্যতেও দেবে। একইভাবে নিজের পায়ে দাঁড়াতে চেষ্টা করা অনেক রাষ্ট্রকে সাহায্য করে যাচ্ছে আমেরিকা।
আপনি যুক্তরাষ্ট্রকে উন্নত ও মহৎ রাষ্ট্রের তকমা দিলেন। তাহলে দেশটিতে এত গোলাগুলির ঘটনা ঘটে কেন?
যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের দ্বিতীয় সংশোধনীতে আর্মস রাখার অধিকারের বিষয়টি যুক্ত হয়। এটা অনেক আগের কথা। তখন পরিস্থিতি সেরকমই ছিলো। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আজকের মতো এতটা সুদৃঢ় ছিলো না। আইনের শাসন ততটা স্ট্রং ছিলো না। সে কারণে আত্মরক্ষার জন্য প্রত্যেকের হাতে হাতে অস্ত্র তুলে দেওয়া হয়েছে। তবে আজ আমেরিকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অনেক ভালো। তাই হাতে হাতে অস্ত্র থাকাটা আমার কাছে যুক্তিযুক্ত মনে হচ্ছে না। আরেকটা বিষয় হলো, কোভিড পরবর্তী সময়ে অনেক মানুষ বেকার হয়েছেন। নানা কারণে অনেকের ওপর সামাজিক চাপ বেড়ে গেছে। এতে করে মানুষ তার ধৈর্য হারিয়েছে। ফলে নিউইয়র্কসহ বিভিন্ন স্টেটে ঘটছে গোলাগুলির ঘটনা।
হেইট ক্রাইম বন্ধে সরকারের পরিকল্পনা কী?
হেইট ক্রাইমের ব্যাপারটি দীর্ঘদিন চাপা পড়েছিলো। ডোনাল্ড ট্রাম্প আসার পর তিনি এটাকে উসকে দিয়েছেন। তবে বর্তমান বাইডেন প্রশাসন হেইট ক্রাইমের ঘটনাগুলোর লাগাম টানার চেষ্টা করছেন বলে আমি মনে করি। তারা অস্ত্র নিয়ন্ত্রণে আইন করার উদ্যোগ নিয়েছেন।