যুক্তরাষ্ট্রে বসে সেই দেশেরই প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন একজন বাংলাদেশি আমেরিকান—এ নিয়ে তুমুল শোরগোল তৈরি হয়েছে। আলোচিত এই মামলা করেছেন বঙ্গবন্ধু পরিষদ ইউএসএ-এর সভাপতি এবং বঙ্গবন্ধু কমিশনের চেয়ারম্যান ড. রাব্বী আলম। চ্যানেল-৭৮৬ এর সঙ্গে বিশেষ লাইভে যুক্ত হয়ে এ ব্যাপারে স্ববিস্তারে জানিয়েছেন ড. রাব্বী।
কী উদ্দেশ্য নিয়ে আপনি বাইডেনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন?
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের ওপর যে ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে, তার মাধ্যমে আমার দেশের সম্মান ভূলুণ্ঠিত করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ অত্যন্ত সুন্দরভাবে দেশ পরিচালনা করছে, দেশের উন্নতি হচ্ছে, সমৃদ্ধি হচ্ছে। কিন্তু ভিসানীতির মাধ্যমে সেই উন্নয়নকে ব্যহত করা হচ্ছে। দেশবিরোধী বিএনপি-জামাত টাকা উড়িয়ে বাইডেন প্রশাসনের কয়েকজন লোককে হাত করেছে এবং ভিসানীতি আরোপ করিয়েছে। এখন আমরা যারা বঙ্গবন্ধুর সৈনিক, তারাওতো বসে থাকতে পারি না। আমাদের সেই দায়িত্ববোধ থেকেই মামলাটি করেছি। যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে সংবিধান আমাদেরকে যে অধিকার দিয়েছে, সেই অধিকার বলেই মামলা করা হয়েছে।
এই মামলার ব্যাপারে অনেকেই নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছেন…
আমি আমেরিকার প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে মামলা করেছি, এটা শুনে অনেকেই চোখ কপালে তুলছেন। তারা হয়তো এ ব্যাপারে খুব একটা জানেন না। যুক্তরাষ্ট্রে আপনি চাইলে যে কোনো সময় যে কারও বিরুদ্ধে মামলা করতে পারেন। চাইলে অনায়াসেই রাষ্ট্রের প্রধানের বিরুদ্ধেও মামলা করা যায়। খুব বেশিদিন আগের কথা নয়, ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট থাকা অবস্থায় তার বিরুদ্ধে অনেক মামলা হয়েছে। হ্যাঁ, এটা ঠিক যে, মামলা করার প্রক্রিয়াটা একটু জটিল। ল’ ফার্ম লাগে, লিগ্যাল এক্সপার্ট লাগে, আইনজীবী লাগে, যথেষ্ট অর্থও লাগে। অনেকের হয়তো সেই ক্যাপাসিটি নাই, তাই তারা করেন না। আমার ক্যাপাসিটি আছে, তাই মামলা করেছি। এটা এমন কিছু নয় যে, যুক্তরাষ্ট্রে এই প্রথম হয়েছে।
এই মামলার সঙ্গে কোনো সংগঠনের সম্পর্ক আছে কি?
ব্যাপারটা আমিও ক্লিয়ার করতে চাই। এই মামলার সঙ্গে কোনো সংগঠনের কোনো ধরনের সম্পর্ক নাই। মামলাটি করেছি আমি ব্যক্তি রাব্বী। আমি মিশিগান ডেমোক্রেটিক পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাহী সদস্য। সেই আমিই কিন্তু ডেমোক্রেটিক প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে মামলা করলাম। তা ছাড়া এই দেশে আমি আরও অনেক সংগঠনের সঙ্গে জড়িত। এসব কোনো সংগঠনই এই মামলার সঙ্গে কোনোভাবে যুক্ত না।
শুধু আপনিই কেন সংক্ষুব্ধ হলেন? মামলাটি অন্য কেউ কেন করেনি?
অন্য কেউ কেন মামলাটি করলো না, এই প্রশ্নের উত্তর আমার পক্ষে দেওয়া মুশকিল। তবে হুট করে অতি উৎসাহী হয়ে আমরা এই মামলা করিনি। মামলাটি করার আগে আমি ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে, লাইভে এসে বলেছি, এমন একটা মামলা করতে চাই, কারা কারা আমার সঙ্গে থাকবেন? আমার সেই আহ্বানে কেউ সাড়া দেয়নি। আমার নেতৃত্বে মামলাটি হয়েছে, সঙ্গে ছিলেন আমার দুই ভাই।
মামলায় প্রধান অভিযোগটা কি?
বাংলাদেশকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে অসম্মান করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিনকেন বাংলাদেশের ওপর চাপিয়ে দেওয়া ভিসানীতিতে বলেছেন, কোনো লোক নির্বাচনে অনিয়ম করলে তার পরিবারকেও ভিসা দেওয়া হবে না। এটা মামলার গুরুত্বপূর্ণ একটা পয়েন্টে। বাবার অনিয়মের জন্য সন্তান কেন শাস্তির মুখোমুখি হবে, সেটা আমার মাথায় ঢুকছে না। এ ব্যাপারে বাইডেন প্রশাসনকে অবশ্যই জবাবদিহি করতে হবে।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেছেন, আলোচনায় আসার জন্য এই মামলা। এ ব্যাপারে আপনার কী মত?
উনার এই মন্তব্য দুঃখজনক। মিডিয়ার এটেনশন পাওয়ার জন্য আমাকে মামলা করতে হবে, আমি সেই মানুষ নই। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আমার অসংখ্যবার কথা হয়েছে, তেমন কয়েকটার স্ক্রিনশর্ট আমি প্রকাশ করেছি। আর এখন তিনি এমন একটা ভাব করছেন, যেন আমাকে চেনেনই না। উনি আসলে দ্বিধার মধ্যে রয়েছেন, আমাকে চেনেন বললে কোনো সমস্যায় পড়েন কিনা, সেটা নিয়ে হয়তো তিনি খুব উদ্বিগ্ন। উনি আমাকে অনেক টেক্সট করেছেন, আমি সেগুলোর রিপ্লাই দিয়েছি।
অনেকে আপনাকে আওয়ামী লীগে ‘অনুপ্রবেশকারী’ বলছে…
আমি ছাত্রলীগ করে বড় হয়েছি। যুক্তরাষ্ট্রে এসেও আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত আছি দীর্ঘদিন ধরে। ট্রোল করা যাদের কাজ, তারা করবেই। এ নিয়ে আমার কোনো মাথাব্যথা নেই। সবার জ্ঞাতার্থে মনে করিয়ে দিতে চাই, ২০০১-এ টুইন টাওয়ারে হামলার ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত মুসলমানরা ব্যাপক চাপে পড়ে যায়। এমনকি তারা নামের সামনে মোহাম্মদ লিখলেও ভয় পেতো। সেই কঠিন সময়ে আমি প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের বিরুদ্ধে মামলা করেছি।
মামলার পরবর্তী অবস্থা জানতে চাই।
মামলার কার্যক্রম শুরু হয়েছে গত ২৩ জুন। যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে কার্যক্রম কিছুটা বন্ধ ছিলো। এখন আবার শুরু হয়েছে।
আল জাজিরার বিরুদ্ধে আপনি আরেকটি মামলা করেছিলেন…
আপনারা জানেন, ‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টার্স ম্যান’ নামে একটি ডকুমেন্টরি প্রকাশ করেছিল আল জাজিরা। সেখানে আমাদের প্রধানমন্ত্রী, সেনাপ্রধানসহ বর্তমানে ক্ষমতাসীন আরও অনেক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকে হেয় করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশকে বলা হয়েছে মাফিয়া স্টেট। এর বিরুদ্ধে আমি একটা মামলা করেছিলাম। এখানে অবশ্য বাদী করা হয়েছে বঙ্গবন্ধু পরিষদ যুক্তরাষ্ট্রকে।
এই মামলাটি এখন কোন পরিস্থিতিতে আছে?
আল জাজিরার বিরুদ্ধে করা মামলাটা নিয়ে একটা দুঃখজনক ঘটনা ঘটেছে, সেটা আমি আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করবো। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন একদিন টেক্সট করে আমাকে জানালেন যে, ইলিয়াস, কনক, দেলোয়ার, জুলকারনাইন সায়েরসহ আল জাজিরার বিরুদ্ধে যে মামলা করা হয়েছে, সেটা তুলে নিতে হবে। কারণ এরা টাকার বিনিময়ে এমন রিপোর্ট করিয়েছেন, সেটা বিশ্বাস করেন না ড. মোমেন। এছাড়া তিনি একটা মিটিংয়ে এদেরকে দেশপ্রেমিক আখ্যা দিয়েছেন এবং বলেছেন, ইলিয়াস-কনকরা নাকি এ যুগের মুক্তিযোদ্ধা। তার এমন বার্তায় আমি অবাক হয়েছি বটে, কিন্তু গত এক বছরে কথাটা কারও সঙ্গে শেয়ার করিনি। পাল্টা প্রশ্ন না করে আমি মামলা তুলে নিয়েছি।