Channel 786 | চ্যানেল ৭৮৬ | Community Bangla Newspaper

‘জালালাবাদবাসীর খোয়া যাওয়া অর্থ উদ্ধার করা হবে, ইনশাআল্লাহ’

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১২:৪৯, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৩

‘জালালাবাদবাসীর খোয়া যাওয়া অর্থ উদ্ধার করা হবে, ইনশাআল্লাহ’

যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশি কমিউনিটির অন্যতম বড় আঞ্চলিক সংগঠন জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশন অব আমেরিকা। সংগঠনের ফান্ডের টাকা দিয়ে বেআইনিভাবে ব্যক্তিগত মালিকানায় ভবন কেনাকে কেন্দ্র করে চরম ক্ষুব্ধ এর সদস্যরা। ঘটনার আদ্যোপান্ত এবং সংকটের সমাধান নিয়ে চ্যানেল-৭৮৬ এর সঙ্গে খোলামেলা কথা বলেছেন জালালাবাদ এসোসিয়েশন অব আমেরিকার সভাপতি বদরুল খান ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক রোকন হাকিম। 
   
প্রশ্ন : সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহে জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশন অব আমেরিকা কি তার ইমেজ হারিয়েছে? 
বদরুল খান : আমি সেটা মনে করি না। জালালাবাদ এসোসিয়েশন অব আমেরিকার বয়স প্রায় ৪০ বছর। এত দীর্ঘ একটা সংগঠনের পথচলায় কিছু ত্রুটি তো থাকতেই পারে, তবে মোটাদাগে ভালোভাবেই এগিয়ে যাচ্ছে জালালাবাদ এসোসিয়েশন। আর অপরাধ করে ব্যক্তি, সংগঠন করে না। অবৈধভাবে ভবন কেনা নিয়ে যা হয়েছে, তা দুঃখজনক, তবে তার জন্য সংগঠনের ইমেজ নষ্ট হওয়ার কিছু দেখি না।

প্রশ্ন : খুব সংক্ষেপে ঘটনাটা জানতে চাই।
বদরুল খান : ৩ লাখ ৩২ হাজার ডলার দিয়ে অনিয়মতান্ত্রিকভাবে নিউইয়র্কের এস্টোরিয়ায় একটা বাড়ি কেনা হয়েছে। আমরা জানতে পারি, টাকাটা জালালাবাদ এসোসিয়েশনের ফান্ড থেকে নেওয়া হলেও বাড়িটা কেনা হয়েছে অন্য এক ব্যক্তির নামে, অন্য একটি সংগঠনের নামে, যেটার নাম জালালাবাদ ইউএসএ। এটা জানাজানি হওয়ার পর সংগঠনের সবাই এর একটা সুষ্ঠু সমাধান চেয়েছে। আমরা প্রায় ৮ মাস অপেক্ষা করেছে, কিন্তু সমাধান হয়নি। কারণ যারা বাড়িটা কিনেছিলেন, তারা সহযোগিতা করেননি। এরপরই বিষয়টা জটিল আকার ধারণ করেছে।

প্রশ্ন : আপনারা তো আইনি পদক্ষেপ নিয়েছেন?
বদরুল খান : হ্যাঁ, যখন দেখলাম নিজেরা মীমাংসা করতে পারছি না, তখনই আইনি ব্যাপারটা সামনে আসলো। ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নিও আমাদের এই সংগঠেনর সঙ্গে জড়িত। এক সময় তিনি আমাদের ডাকলেন, বিস্তারিত শুনলেন। অন্যান্য সবার কাছেও তিনি ঘটনার ব্যাপারে শুনেছেন। এরপর ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নির অফিস থেকে একটা তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। শিগগিরই তারা একটা সমাধান দেবেন বলে আশাকরি।

প্রশ্ন : সংগঠনের এত বড় একটা অ্যামাউন্ট কীভাবে এক ব্যক্তি তুলে ফেললেন?
রোকন হাকিম : আমাদের সংগঠনের বহিস্কারকৃত সাধারণ সম্পাদক মইনুল ইসলাম। তিনি সাবেক কমিটির কোষাধ্যক্ষ ছিলেন। সে কারণে এই ফান্ডে তার ফুল এক্সেস ছিল। টাকা তোলার ব্যাপারে এই সুযোগটাই তিনি কাজে লাগিয়েছেন। এর আগে ২০২০ সালে জালালাবাদের ফান্ড থেকে ২ লাখ ৫০ হাজার ডলারের একটা অ্যামাউন্ট অবৈধভাবে একটি প্রতিষ্ঠানকে দিয়েছিলেন মইনুল ইসলাম। সেটাও ছিল অগঠনতান্ত্রিকভাবে। ব্যাপারটা তখনকার কমিটির সবাই জানতেন বলেই মনে করি। এবারও তিনি সেটাই করলেন।

প্রশ্ন : আপনারা নিজেরা বিষয়টা সমাধানের চেষ্টা করেননি?
রোকন হাকিম : এ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা যখন তুঙ্গে তখন আমরা অভিযুক্ত মইনুল ইসলামকে নিয়ে একটা মিটিং করি। সেখানে তিনি অনিয়মতান্ত্রিকভাবে বাড়ি ক্রয়ের জন্য ক্ষমা চেয়েছেন এবং বলেছেন, তিনি নাকি জালালাবাদবাসীর ভালোর জন্য এই বাড়ি ক্রয় করেছেন। এরপর টাকাটা উদ্ধার করার জন্য ৯০ দিনের সময় নেয় বোর্ড অব ট্রাস্টি, কিন্তু সেই সময়ের মধ্যে টাকা উদ্ধার করা যায়নি। পরে তারা কার্যকরী কমিটির কাছে চিঠি দিয়ে তাদের অপারগতার কথা জানান এবং গঠনতন্ত্র অনুযায়ী আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেন।

প্রশ্ন : একটি পক্ষ বলছে, নন-প্রফিট সংগঠনের নামে ভবন কেনা যায় না, তাই ব্যক্তিগত নামে কেনা হয়েছে…।
রোকন হাকিম : এটা একটা বানোয়াট কথা। আমি নিজেও ব্যাপারটা নিয়ে বিভ্রান্ত ছিলাম। আমাদের যিনি অ্যাটর্নি আছেন, তিনি বিষয়টা ক্লিয়ার করেছেন। নন প্রফিট সংগঠনের নামে বাড়ি কিনতে গেলে আপনাকে একটা নির্দিষ্ট প্রোসিডিউর মেনটেইন করতে হয়, বেশ কিছু কাগজপত্র জমা দিতে হয়। তারপর অ্যাটর্নি অফিসের অনুমতি পেলে লোনের জন্য এপ্লাই করা যায় এবং বাড়ি কেনা যায়।

প্রশ্ন : যেভাবেই হোক, ভবন কেনা হয়ে গেছে। এখন সেটা সংগঠনের করে নেওয়া যায় না?
রোকন হাকিম : ব্যাপারটা এতটা সহজ নয়। এই ভবনের মর্টগেজ ঠিকঠাকভাবে পরিশোধ করা হয়নি। ব্যাংক গত ৮ মাসে মইনুল ইসলামের কাছ থেকে মর্টগেজ না পাওয়ায় তা ফরক্লোজারে যাবার পথে। এটা এখন বিষফোঁড়া, তাই এই দায় সংগঠন নিতে পারে না কিংবা নেওয়ার ক্ষমতাও নেই। অভিযুক্ত মইনুল ইসলাম বলেছেন, জালালাবাদ থেকে তিনি কিছু নিতে আসেননি, দিতে এসেছেন। তাহলে এই ভবন থেকে লাভ করা ৪৩ হাজার ৫০০ ডলার তিনি পকেটে ভরলেন কীভাবে? হার্ড লোন থেকে কমিশন হিসেবে এই অর্থ নিয়েছেন তিনি। 

প্রশ্ন : এই ঘটনায় জালালাবাদবাসীর প্রতিক্রিয়া কেমন?
বদরুল খান : তারা আসলে ভীষণ হতাশ। এটা কিন্তু অনেক মানুষের কষ্টের-শ্রমের পয়সা। বছরের পর বছর চাঁদা দেওয়ার পর এই অর্থ জমা হয়েছে। কোনো অনুমতি ছাড়া কীভাবে একজন দায়িত্বশীল মানুষ এই অর্থে হাত দিতে পারে, তা ভেবে অবাক হচ্ছে সবাই। এটা আসলে আমাদের সবার জন্য লজ্জার। আমরা জালালাবাদবাসীকে কথা দিয়েছে, খোয়া যাওয়া অর্থ অবশ্যই উদ্ধার করা হবে।

প্রশ্ন : এত হতাশার মধ্যে কোনো ভালো খবর নেই?  
রোকন হাকিম : অবশ্যই আছে। গত কমিটি নিউজার্সিতে একটি কবরস্থান কেনেন, যেটার লোন ছিল ৩৬ হাজার ডলার। অথচ অ্যাকাউন্টে তারা রেখে গেছেন মাত্র আড়াই হাজার ডলার। এটার কোনো সলিউশন তারা দিয়ে যাননি। তারপরও আমরা এই লোন টেনে নিয়েছি। এখানে একটা সুখবর দিতে চাই। চলতি মাসে আর একটা পেমেন্ট দিয়েই কবরস্থানটি আমরা সম্পূর্ণ আমাদের মালিকানায় নিয়ে নিচ্ছি।


চ্যানেল ৭৮৬ এর নিউজ রুম এ যোগাযোগ করতে ই মেইল করুন এই ঠিকানায় [email protected] । আপনার পন্য বা সেবার প্রচারে বিজ্ঞাপন প্রচারের জন্য কল করুন +1 (718) 355-9232 এই নাম্বারে।

সংবাদটি শেয়ার করুনঃ