বাংলাদেশে গত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হয়েছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এতে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছে আওয়ামী লীগ। এই নির্বাচন নিয়ে দেশে-বিদেশে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। সেই বিশ্লেষণে যুক্ত হয়েছেন নিউইয়র্কের বাংলাদেশি কমিউনিটির বিশিষ্ট সাংবাদিক সালাউদ্দিন আহমেদও। চ্যানেল৭৮৬ এর অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়ে নির্বাচন ছাড়া নানা বিষয়ে কথা বলেছেন তিনি।
নতুন বছর কেমন যাচ্ছে?
আসলে ভালোমন্দ মিলিয়েই এই জগৎ। নতুন বছরেও ফিলিস্তিনি ইস্যু আমাদেরকে স্বস্তি দিচ্ছে না। গাজার পরিস্থিতি কাঁদাচ্ছে মুসলিম বিশ্বকে। শুধু মুসলমান নয়, বিবেকবান মানুষ মাত্রই এই ব্যাপারটা নিয়ে উদ্বিগ্ন। এ কারণে এবার ইংরেজি নববর্ষটাও খুব ভালোভাবে পালিত হয়নি। পাকিস্তান তো ঘোষণা দিয়েই এই উৎসব বাতিল করেছে। আমরা যারা উত্তর আমেরিকায় থাকি, তারাও কোনো প্রকার উৎসবে যোগ দেইনি। ইহুদি-খ্রিষ্টানদের একটা বিশাল অংশও এবার উৎসবে যোগ দেয়নি। এ কারণে নতুন বছরের শুরুটা খুব ভালো হয়েছে—এমনটা বলতে পারছি না।
শীত বাড়ছে, বাড়ছে দুর্ভোগ। বিষয়টা কীভাবে দেখছেন?
শীতের প্রকোপ কিন্তু এবার বেশিই মনে হচ্ছে। নিউইয়র্কে তুষারপাত হচ্ছে। প্রকৃতির এই বিরূপ আচরণের জন্য আমরাই নানাভাবে দায়ী। শুধু বাংলাদেশ না, পৃথিবীর সর্বত্রই নানাভাবে জলাশয় ভরাট করে ফেলা হচ্ছে, বন উজাড় করা হচ্ছে, গাছ কেটে ফেলা হচ্ছে। এসব কারণে প্রকৃতি রুদ্রমূর্তি ধারণ করেন। শীতের সময় প্রচণ্ড শীত আবার গরমের সময় বেশি গরম অনুভব করছি আমরা।
বাংলাদেশে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনটা কেমন হয়েছে?
যেটা হয়েছে সেটা একদলীয় নির্বাচন। অবাধ, সুষ্ঠু এবং গ্রহণযোগ্য বলতে যা বুঝানো হয়, এই নির্বাচনে সেটার প্রতিফল ঘটেনি। হ্যাঁ, রক্তপাত-প্রাণহানি হয়নি, কিন্তু কোনোভাবেই এটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নয়। যে নির্বাচনের ফলাফল আগে থেকেই জানা যায়, সেটা আর যাই হোক, গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। তবে দেশি-বিদেশি এত এত চাপের মধ্যেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইলেকশনটা করে নিয়েছেন, এটা তার দারুণ ক্যারিশমা। মন্ত্রিপরিষদ গঠনেও তিনি চমক দেখিয়েছেন। পুরনো অনেককে বাদ দিয়েছেন, তুলনামুলক কম বয়সীদের ক্যাবিনেটে যুক্ত করেছেন। এখন দেখা যাক, সামনের দিনগুলোতে কী হয়, যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন এই সরকারকে কীভাবে গ্রহণ করে।
নিউইয়র্কের বাংলাদেশিরা নির্বাচনটাকে কীভাবে দেখছেন?
যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত বাংলাদেশিদের মধ্যে দেশীয় রাজনীতি আকড়ে থাকার যে প্র্যাকটিস, এটা আসলে নাড়ীর টানেই হচ্ছে। যারা বাংলাদেশে জন্ম নিয়েছেন, পড়াশোনা করেছেন, রাজনীতি করেছেন, তারাই এ দেশে এসে রাজনীতিকে কন্টিনিউ করছেন। এখানে জন্ম নেওয়া কোনো ছেলেমেয়ে কিংবা তুলনামূলক যারা, তারা কিন্তু রাজনীতির সঙ্গে নেই। তো এখানে যারা রাজনীতি করছেন, তারা এবারের নির্বাচনে খুব একটিভ ছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন, এমন অন্তত চারজন এবার বাংলাদেশের সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন। এছাড়া অনেক নেতা নির্বাচনকে উপলক্ষ করে বাংলাদেশে গেছেন। তারা বিভিন্ন প্রার্থীর পক্ষে ক্যাম্পেইন করেছেন। তবে আমি আবারও বলি, তরুণ প্রজন্মের মধ্যে কিন্তু এগুলো নিয়ে আগ্রহ নেই।
হেইট ক্রামই বেড়ে যাচ্ছে। আপনার পর্যালোচনা জানতে চাই।
এটা অত্যন্ত দুঃখজনক ও উদ্বেগজনক। বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েও হেইট ক্রাইম থামাতে পারছে না নিউইয়র্ক প্রশাসন। কখনো কখনো হয়তো এই অপরাধ কিছুটা কমেছে, কিন্তু নির্মূল হয়নি। ফিলিস্তিনি ইস্যুকে কেন্দ্র করে সাম্প্রতিক সময়ে নিউইয়র্কে কিছু হেইট ক্রাইমের ঘটনা ঘটেছে। শুধু তাই নয়, এখানকার ইহুদি ও মুসলিম কমিউনিটির মধ্যে এ নিয়ে কিছুটা হলেও দূরত্ব তৈরি হয়েছে। ট্রাম্পসহ অনেক শীর্ষ রিপাবলিকান নেতা নানা উস্কানিমূলক বক্তব্য দিয়ে পরিস্থিতি আরও খারাপ করে ফেলছেন। তাই বিষয়টা সবাইকেই উপলব্ধি করতে হবে। বাংলাদেশি কমিউনিটিকে আরও সচেতন হতে হবে। সতর্ক থাকতে হবে।
চ্যানেল ৭৮৬ এর নিউজ রুম এ যোগাযোগ করতে ই মেইল করুন এই ঠিকানায় [email protected] । আপনার পন্য বা সেবার প্রচারে বিজ্ঞাপন প্রচারের জন্য কল করুন +1 (718) 355-9232 এই নাম্বারে।