Channel 786 | চ্যানেল ৭৮৬ | Community Bangla Newspaper

জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ রক্ষায় কোরবানি ব্যবস্থাপনা

মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ

প্রকাশিত: ২২:২৬, ১৩ জুলাই ২০২১

জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ রক্ষায় কোরবানি ব্যবস্থাপনা

কোরবানি মুসলিম জীবনের এবাদতের মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এবাদত। যা সামর্থবান ব্যক্তির জন্য ফরয। কোরবানির সাথে পশুর সম্পর্ক থাকায় কোরবানির ব্যবস্থাপনা অতীব প্রয়োজনীয় বিষয়। অব্যবস্থাপনার ফলে, জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ এবং আবহাওয়ার ক্ষতি হওয়ার চরম সম্ভাবনা থাকে। ইসলাম অন্যের যেন ক্ষতি সাধিত না হয়, সেদিকে নজর দেওয়ার নির্দেশ দেয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমরা নিজের ক্ষতি করো না এবং অন্যের ক্ষতি করো না। (মুয়াত্তায়ে মালেক, বায়হাকী, মুস্তাদরাক)।

পশু কোরবানির বিধানটি, ইব্রাহিম (আঃ) এর পুত্র ইসমাঈল (আঃ)কে ত্যাগ করার নির্দেশের মাধ্যমে পৃথিবীতে প্রচলন হয়। এই বিধান আল্লাহর দেয়া আত্মাকে ধৌত করার অন্যতম মাধ্যম। এর মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের চেষ্টা করা হয়।
       
কোরবানী আল্লাহর দেয়া বিধান বলেই তা কারো জন্য কষ্টদায়ক বা ক্ষতিকর হতে পারে না। আল্লাহতায়ালা পৃথিবীতে বান্দার জন্য কষ্টকর হবে এমন কিছু চাপিয়ে দেননি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন, পবিত্রতা ঈমানের অংশ। তাই নির্দ্বিধায় বলা যায়, ক্ষতিকর বা অপব্যয়কর বিষয়ে ইসলাম নিরুৎসাহিত করেছেন।

আমরা সবাই জানি, পর্যাপ্ত ব্যবস্থাপনার অভাবে কোরবানির পশুর রক্ত, হাড় এবং বর্জ্য হয়ে উঠতে পারে জনস্বাস্থ্য এবং পরিবেশের জন্য ভয়ঙ্কর। যত্রতত্র পশু জবায়ের রক্ত সাথে সাথে ধুয়ে না ফেলা হাড় ও চর্বিজাতীয় অপ্রয়োজনীয় অংশ সঠিকভাবে না রেখে যত্রতত্র ফেলা রাখাতে জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ ক্ষতি হতে পারে।
      
ফেলে রাখা অংশ থেকে ভাইরাস জন্মানোর সম্ভাবনা থাকে, অপ্রয়োজনীয় অংশ পঁচে আবহাওয়াকে বিপদজনক করার সম্ভাবনা থাকে। এতে করে জনস্বাস্থ্যের ব্যাপক ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আমরা সাধারনত ঢাকাতে পাঁচ বা সাতদিন পরে ফেরার পর অলিতে-গলিতে পশুর বর্জ্যের পচা গন্ধ পেয়ে থাকি। যা অব্যবস্থাপনার ফলে হয়ে থাকে।
এসব সমস্যা থেকে বাঁচার জন্য, কোরবানির পূর্বেই আমাদেরকে কিছু বিষয়ে জনসচেতনতা তৈরি করা জরুরি।

প্রথমত কোরবানির অব্যবস্থাপনার ফলে সংঘটিত সমস্যাগুলো চিহ্নিত করা জরুরী, তাতের জনমনে সচেতনতা তৈরি হবে। সমস্যা সমূহ হলো-

১. বায়ু দূষিত হবে; কোরবানীর পশুর বর্জ দীর্ঘদিন পড়ে থাকার ফলে তার থেকে দুর্গন্ধ তৈরি হবে যার ফলে বায়ু দুর্গন্ধময় হয়ে যাবে।
২. ব্যাক্টেরিয়ার উদ্ভব ও পশুর পঁচা-গলা বর্জ থেকে বিভিন্ন ব্যক্টেরিয়া তৈরি হয়ে জনস্বাস্থ্যের ক্ষতিসাধন করতে পারে।
৩. চলাচলে বিঘ্ন ঘটানো।
৪. পরিবেশকে ক্ষতিসাধন।
৫. জনস্বাস্থ্যের প্রতি হুমকি;

এগুলো প্রাথমিক সমস্যা বলে চিহ্নিত। এসব সমস্যাসহ এবং সমস্যা সমাধানের কিছু ব্যবস্থাপনার নীতি আমরা অনুসরণ করতে পারি।
১. এলাকা ভিত্তিক বর্জ্যের জন্য একটি বা দুটি স্থান নির্দিষ্ট করে দেওয়া। জনবসতি থেকে একটু দূরে হবে তাতে করে যত্রতত্র বর্জ হওয়ার সম্ভাবনা দূর হয়। 
২. সরকারি অথবা বেসরকারি সংগঠনের মাধ্যমে জনমনে সচেতনতা তৈরি করতে পারলে এই সমস্যার সমাধান ঘটবে।
৩. কোরবানীর পশুর হাট ইজারাকারীদের আইনের আওতায় আনা। 
আমরা সবাই দেখে আসছি, বিগত বছরগুলোতে কোরবানির ঈদ শেষ হওয়ার পরও যে সকল স্থানে পশুর হাট বসে সেখানে পরিষ্কারের ব্যবস্থা থাকে না হলে পশুর বর্জ্য বৃষ্টির পানিতে ভেসে নদীর পানি বাসা বাড়িতে প্রবেশ করে যার থেকে পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য ক্ষতির সম্মুখীন হয় তাই ইজারা কারীদের আইনের আওতায় আনা।
৪. বর্জ্য মাটিতে পুঁতে ফেলা; 
পরশু একটি নির্দিষ্ট স্থানে জবাইয়ের পর সকল কাজ শেষে পশুর রক্ত ও অপ্রয়োজনীয় বস্তু সমূহ মাটিতে পুঁতে ফেলা যার ফলে পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য ক্ষতি হওয়া থেকে বাঁচা যাবে।
৫. পশুর চামড়া দ্রুত প্রক্রিয়াজাত করা; আমরা সবাই জানি পশুর চামড়া থেকে প্রক্রিয়াজাত করে আমরা জুতো ব্যাগ যাবতীয় প্রয়োজনীয় জিনিস উৎপাদন করতে পারি। তাই দ্রুত চামড়া প্রক্রিয়াজাত করেফেলা।
৬. চামড়ায় কালোবাজারি দমন করা; বিগত বছরগুলোতে চামড়া কালোবাজারির খপ্পরে পড়ে ব্যবসায়ী প্রাণের মূল্য না পাওয়া চামড়া যত্রতত্র ফেলে দেয় যাতে পরিবেশের চরম ক্ষতি সাধিত হয়
৭. স্বেচ্ছাসেবক দ্বারা তৎপরতা চালানো; কোরবানির সকল ব্যবস্থাপনার নীতি যথাযথভাবে অনুসরণ করা হচ্ছে কিনা তা স্বেচ্ছাসেবকদলের যাচাই-বাছাই করানো
৮. জীবাণুনাশক ব্যবহার করা; জীবাণুনাশক ব্যবহার করার মাধ্যমে সাবধানতা অবলম্বন করা যাতে জনস্বাস্থ্য এবং পরিবেশ সুরক্ষিত থাকে। সর্বোপরি নিজের সচেতন থাকা এবং সমাজ ও রাষ্ট্রকে সচেতন রাখার মাধ্যমে জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের ক্ষতি থেকে রক্ষা করা সম্ভব।

সংবাদটি শেয়ার করুনঃ