একজন নিউইয়র্ককার হিসেবে, বিশ্বাস করেন, আমি গভর্নর অ্যান্ড্রু কুওমোকে খুব পছন্দ করি। আর একজন নারী হিসেবে ততটাই ঘৃণা। আমার নিজের মধ্যেই বৈপরীত্য বাস করে। মানুষ হিসেবে এই দ্বন্দ্ব আদিকাল থেকে।
কুওমোর পদত্যাগের খবরটি আসে ১০ আগস্ট দুপুর ১২টার দিকে। এক্ষেত্রে নিউইয়র্ক টাইমসের সংবাদের শিরোনামটি খুব পছন্দ হয়েছে আমার। দশকের বেশি সময় ক্ষমতায় থাকা নিউইয়ক গভর্নরের অসম্মানজনক বিদায়। তবে আমি আজকে এমন একটি বিষয় নিয়ে লিখতে বসেছি যা সবসময় আমাকে খুবই অস্বস্তি দেয়।
মুখরোচক জনপ্রিয় এই বিষয় নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে গণমাধ্যম খবরের কাটতি বাড়ানোর জন্য যতটা উদগ্রীব হয়ে থাকে, আমি ততটাই বাকরুদ্ধ হয়ে যাই। এমন না গণমাধ্যমকর্মী হিসবে এইসব ঘটনা আমি এড়িয়ে যেতে চাই, কিন্তু আমি চাই আমার মেয়েটি যখন বড় হবে ও যেনো কখনো এই শব্দগুলো না শুনে। একজন কন্যার মা হিসেবে নিরাপদ পৃথিবী চাই লোলুপ পুরুষ সমাজবিহীন।
কিন্ত সম্ভব? সমাধানের পথ খোঁজা কী সহজ? ফিরে যেতে চাই অপ্রাসঙ্গিভাবে পৃথিবীর দুই প্রান্তের দুইজন মানুষকে একই শিরোনামে আনার জন্য। কারণ এই সভ্য সমাজে পুরুষদের লালসা পূরণ করার জন্য যুগে যুগে যেমন পরীমনিদের তৈরি করা হয় তার বিপরীতে সভ্য সমাজে পরীমণি না হলেও পুরেুষের লালসা থেকে বাচতে পারেন না অনেক নারীও।
দুটি ঘটনার অমিল আছে অনেক জায়গায়—তবে মিল একটি জায়গায়? সেটি হচ্ছে নারীকে পুরুষেরা সব সময় পণ্য হিসেবে ভোগ করতে চায়। তবে সেই ভোগের বিষয়ে প্রতিবাদ করা যেমন বারণ ঠিক তেমনি বিচার চাওয়াটাও ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ।
যৌতুকের টাকার জন্য একজন নির্যাতিত নারী যখন স্বামীর ঘর করতে না পেরে অর্থ উপার্জনের জন্য পুরুষের লালসাকে জিম্মি করে! তাহলে অপরাধ কোথায়? রাতের অন্ধকারে ঘরে বউ সন্তান রেখে অন্য নারীর প্রতি যার লোভ হয় শাস্তি তো তাকে দিতে হবে? অসততা তো সেই নারী করেনি যে নিজের রোজগারের জন্য এই পুরুষদের জন্য ফাদ পাতে। নারীর অসহায়ত্ব নিয়ে বড় বড় কলাম লেখা যায়, আবার রাতের অন্ধকারের নারীর সাথে সময় কাটানো কোন তথ্য প্রকাশ করাটা দন্ডনীয় অপরাধ।
সেই কথা আবার বলা যাবে না সভ্য সমাজে। বললেই পরিণতি হবে পরীমনির মতো। বিশ্বাস করেন আমি এখনো কারণ খোজে পাচ্ছি না এই মেয়েটাকে কেন আটকে রেখেছে? এর দোষ কি? সভ্য সমাজের অনেকের মুখোশ খুলে দেয়ার জন্য? নাকি পুরুষ তান্ত্রিক সমাজের অনেক কষ্ট হচ্ছে … যে প্রভাবশালী পুরুষেরা কিভাবে অসহায় পরীমনিদের কাছে? শারিরীক লালসা নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা নেই প্রভাবশালী পুরুষদের কাছে। এর জন্য কি লজ্জা হচ্ছে?
তবে একই চিত্র তৃতীয় বিশ্বের একটি দেশ থেকে অ্যামেরিকার মত দেশেও।
যেমন আমি কোনভাবেই আর পছন্দ করতে পারছি না নিউইয়র্র কের গভর্নর এন্ড্রু কুমোকে। অথচ কোভিড নাইনটিন মহামারী মোকাবেলার সময় আমাদের নিউইয়র্কের মানুষদের কাছে হিরো বনে গিয়েছিলেন? প্রভাবশালী একটি পরিবারে জন্ম নিয়ে আইন বিষয়ে পড়াশোনা করে, অ্যামেরিকার মতো দেশে সেক্রেটারি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন, ছিলেন নিউইয়র্কের এটনি জেনারেল , ২০১১ সাল থেকে গভর্র হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। যার নিজের ঘরেও তিনটি কন্যা আছে। নারীর শরীরে অযাচিত যে কোন স্পর্শ ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ। এটি কি গভর্নর কুওমো এতদিন পরে জানলেন?
বড় বড় প্রতিষ্ঠানের বড় কর্তা হওয়া যায়, মেধার প্রমাণ করে উচু স্থানে উঠা যায়, কিন্তু নিজের ভিতরের জৈবিক-লালসা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে… তার পরিণতি হয় ভয়াবহ। সম্মান দিতে শিখুন আগে। নিজের ঘরের মা, কন্যা সন্তান, বউ কে নিরাপদে রাখার ঢেকুর তুলে বাইরের একজন নারীকে সম্মান দিতে না পারলে সেই অসম্মানের আগুন কখনো না কখনো নিজের গায়ে এসে লাগবেই।
বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকষণের লালসা অসম্মানের যেন কারণ হয়ে না দাড়ায়? পায়ের নীচের মাটি শক্ত থাকতেই তাই আগে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করা শিখুন। মঙ্গল আপনার নিজের- মা,স্ত্রী বোন, কন্যার নিরাপদ পৃথিবীর জন্যই।
নূপুর চৌধুরী: সাংবাদিক, নিউইয়র্ক