রোহিঙ্গা ইস্যুটি বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি এ বিষয়টি ২০১৪ সালে আমার লেখা প্রথম বই সংকটের আবর্তে বাংলাদেশ শীর্ষক বইতে কিছুটা আলোকপাত করবার চেষ্টা করেছিলাম। তখন জাতীয় নিরাপত্তা নিয়ে আমার একাডেমিক পড়াশুনা ছিল শুণ্যের কোটায়। সেসময় আমার অনেক বন্ধুরা বলেছিলেম এত কিছু বাদ দিয়ে হঠাত রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে কেন আমি এত সজাগ।
বেশি দিন লাগে নি মাত্র তিন বছরের মধ্যেই এটি বাংলাদেশের অন্যতম বড় সংকট হিসেবে দেখা দিয়েছে। রোহিঙ্গারা মুসলিম, একটি মুসলিম দেশ হিসেবে যেমনি আমরা রোহিঙ্গাদের মানবিক অধিকারে সাড়া না দিয়ে পারি না, ঠিক তেমনি জাতীয় নিরপত্তার বিষয়টিও আমরা উপেক্ষা করতে পারি না। ২০১২ সালে রোহিঙ্গাদের উপর যখন মিয়ানমার জান্তাদের আক্রমণ শুরু হল তখন ততকালীন অথর্ব পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিপুমনিকে সংসদে বক্তব্য দিতে শুনলাম মিয়ানমার বাহিনী রোহিঙ্গা জঙ্গীদের দমন করছে , সুতরাং এতে বাংলাদেশ খুশী হওয়া ছাড়া আর কিছুই করার নেই। কারণ তখন জঙ্গীবাদ বিরোধী বক্তব্য দুনিয়া জুড়ে জনপ্রিয় রাজনৈতিক পরিভাষা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিল।
কোনটাকে জঙ্গীবাদ বলে আর কোনটাকে স্বাধীনতার আন্দোলন বলে এ কান্ডজ্ঞানটুকু আমাদের এম পি মন্ত্রীদের নেই। পেছনের কথা ফেলে সামনের দিকে আসি। রোহিঙ্গা পরিস্থিতি যে যায়গায় এসে দাঁড়িয়েছে এতে এটা স্পষ্ট মিয়ানমারের সঙ্গে এ ইস্যুতে আমাদের আজ হউক কাল একটি যুদ্ধে জড়াতেই হবে। সামরিক বিজ্ঞানে একটি প্রতিষ্ঠিত কথা আছে, "The best defense is a good offense". আত্মরক্ষার প্রস্তুতিই যুদ্ধের হুমকি কমিয়ে দেয় এটি সামরিক বিজ্ঞানের প্রতিষ্ঠিত থিউরি। প্রশ্ন হল ২০১৭ সাল থেকে এপর্যন্ত বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্নে আমরা কতটুকু প্রস্তুতি নিয়েছি। মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের প্রশ্নে আমরা কি সর্বদলীয় একটি বৈঠক করতে পেরেছি । উত্তর না । কারণ দেশের অর্ধেক জনগোষ্ঠীকে রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার বাইরে রেখেই আমারা এখন সবকিছু করছি। দুনিয়া এভাবে চলে না। যুক্তরাষ্ট্রে ক্ষমতার রাজনীতির প্রশ্নে দেশটি প্রবলভাবে এখন বিভাজিত। একপক্ষ ডেমোক্রেট অন্যপক্ষ ডোনাল্ড ট্রাম্প । কিন্তু ইউক্রেন প্রশ্নে উভয় শিবিরই জাতীয় ঐকমত্যে পৌছেছে, ইউক্রেনের পক্ষে দাঁড়িয়েছে।
বাংলাদেশ মিয়ানমার প্রশ্নে যে নতযানু নীতি প্রদর্শন করে যাচ্ছে এতে মিয়ানমারের বাংলাদেশের সঙ্গে যুদ্ধে জড়ানোকে আন্দোলিতই করবে বলে আমি মনে করি। আমরা যুদ্ধ চাই না , শান্তি চাই এ আওয়াজ মিয়ানমারকে যুদ্ধ উস্কানিতেই শামিল করবে। জাতিসংঘে ভোটাভোটিতে চীন ও ভারত যে মনোভাব পোষন করেছে তাতে আপনাকে ধরে নিতেই হবে মিয়ানমারের সাথে যুদ্ধ লাগলে কেউই আমাদের পক্ষ নিবে না। এটি ধরে নিয়েই আমাদের ডিফেন্স সাজাতে হবে। আমাদের যুদ্ধ আমাদেরকেই করতে হবে। এজন্য সর্বপ্রথমে প্রয়োজন সকল দলের অংশগ্রহণে একটি জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিল গঠন করা, পাশাপাশি এতে নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের সংযুক্ত করা। কুমিল্লা থেকে বান্দরবান পর্যন্ত প্রত্যেকটি স্কুল কলেজে বিএনসিসির অধীনে বাধ্যতামূলক সামরিক প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করা। রোহিঙ্গাদের ইস্যুটি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তুলে ধরতে কূটনৈতিক ততপরতার পাশাপাশি বিশ্বজনমত গড়ে তুলতে নাগরিক উদ্যোগ নেয়া ।
ইমরান আনসারী | প্রফেসর, স্টেট ইউনিভার্সিটি অফ নিউইয়র্ক