করোনা মহামারির সময় থেকেই যুক্তরাষ্ট্রে বাড়ির মূল্য বাড়া শুরু হয়। সুদের হার কম, চাহিদার তুলনায় বাড়ির জোগান কম, শহুরে জীবন থেকে কম ঘনবসতি এলাকায় স্থানান্তর মানুষের বাড়ি ক্রয় করাকে ত্বরান্বিত করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রেকর্ড দামে বাড়ি কেনা-বেচা হচ্ছে। বর্তমান বাড়ির বাজার মূল্য অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। এ অবস্থায় করণীয় কি সেটা বুঝতে অনেকে হিমশিম খাচ্ছে। এই সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে না পারলে কম সুদে বাড়ি কিনে লাভবান না হয়ে বরং ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বর্তমান বাজারে বাড়ি কেনার ক্ষেত্রে অধিকতর সতর্কতা অবলম্বন করে যথেষ্ট পরিমাণে পর্যালোচনা করেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
বাড়ির ব্রোকারদের কেন্দ্রীয় সংগঠন ন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব রিয়েলটরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালে কমপক্ষে ৯০ লাখ আমেরিকান যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরে বিভিন্ন স্থানে স্থানান্তরিত হয়েছে। যা ২০১৯ সালের চেয়ে সংখ্যায় এক লাখ বেশি।
রেডফিনের তথ্য অনুযায়ী, গত জানুয়ারি এবং ফেব্রুয়ারিতে শতকরা ৩১ শতাংশ লোক স্থানান্তরিত হওয়ার পরিকল্পনা করেছে, যা মহামারি পূর্ব থেকে ২৬ দশমিক ১ শতাংশ বেশি। করোনা মহামারি অনেকের অর্থনৈতিক অবস্থা পাল্টে দিয়েছে। তাই নির্ধারিত সময়ের আগেই স্থানান্তরিত হওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে। শহরাঞ্চলের বাসিন্দারা একটু বেশি ভোগান্তিতে ছিলেন, অ্যাপার্টমেন্টে লকডাউনে বন্দী জীবন বাড়ি কেনায় তাঁদের আগ্রহী করেছে।
অন্যদিকে রিয়েলটর ডটকমের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের তুলনায় বাড়ির জোগান কমে গেছে। পুরো যুক্তরাষ্ট্রে মে মাসে বিক্রির জন্য বাড়ি আছে মাত্র পাঁচ লাখ, যা গত বছরের তুলনায় প্রায় ৫৩ শতাংশ কম। বাড়ির বর্ধমান চাহিদা এবং জোগান কমও বাড়ি বিক্রি ত্বরান্বিত করেছে। বর্তমানে গড়ে একটি বাড়ি ৪৩ দিনে বিক্রি হচ্ছে। অনেকে বাড়ি সরাসরি না দেখে ছবি কিংবা ভিডিও দেখেই কিনছেন।
রেডফিন জানিয়েছে, গত এক বছরে বাড়ি ক্রেতাদের ৬৩ শতাংশ সরাসরি বাড়িতে না গিয়ে শুধু ছবি কিংবা ভিডিও দেখেই কিনেছেন। প্রত্যক্ষভাবে বাড়ি না দেখে ক্রয় বৃদ্ধির হার ৩২ শতাংশ।
ন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব রিয়েলটরের তথ্য বলছে, বাড়ির দাম শতকরা ১৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। গত মার্চের হিসাব অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রে সিঙ্গেল ফ্যামিলি বাড়ির দামের গড় মূল্য ৩ লাখ ২৯ হাজার ১০০ ডলার। প্রথমবারের মতো বাড়ির ক্রেতারা ডাউন পেমেন্ট হিসাবে গড়ে ৬২ হাজার ৬০০ ডলার প্রদান করছেন। শতকরা ৮ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট হিসাবে প্রদান করছেন। যদিও ফেডারেল দ্বারা নিয়ন্ত্রিত মর্টগেজের জন্য ৩ দশমিক ৫ শতাংশ ডাউন পেমেন্টে বাড়ি কেনা যায়। তবে ২০ শতাংশ হারে ডাউন পেমেন্ট প্রদান করাকে গোল্ড স্ট্যান্ডার্ড মনে করা হয়। এতে ধারণা করা যায়, মানুষের কাছে নগদ অর্থ রয়েছে।
রেডফিনের রিপোর্ট অনুযায়ী, এখন ১৭ দশমিক ৬ শতাংশ বাড়ি কোনো রকম পরীক্ষা ছাড়াই যেখানে যে অবস্থায় আছে, সেই অবস্থায় বিক্রি হচ্ছে। মহামারির আগে ৬ দশমিক ১ শতাংশ বাড়ি এ শর্তে বিক্রি হতো। সুতরাং, বাড়ির বিক্রেতারা নিজের মতো শর্ত আরোপ করছেন।
ফেডারেল মর্টগেজ নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফ্রেডি ম্যাকের সর্বশেষ জুলাই মাসের তথ্য অনুযায়ী, ৩০ বছরের জন্য স্থায়ী মর্টগেজের গড় সুদের হার শতকরা ২ দশমিক ৭৮ শতাংশ। সুদের হার কম হওয়ার কারণে মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, করোনা মহামারির অনিশ্চয়তার কারণে মর্টগেজের সুদের হার কমেছে, এমনকি ইতিহাসে সর্বনিম্ন হয়েছে। কিন্তু এমনটা নিকট ভবিষ্যতে থাকবে না। ইতিমধ্যে ঘোষণা এসে গেছে, এই হার কীভাবে বৃদ্ধি পাবে। মর্টগেজ সুদের হার কম হওয়ায় টাকা বাঁচানো সম্ভব, যদিও বাড়ি বেশি মূল্যে ক্রয় করতে হচ্ছে। অনেকে অপেক্ষা করছেন, বাড়ির বাজার মূল্য কমতে শুরু করলে বাড়ি কিনবেন কিংবা আশায় আছেন বাড়ি মূল্য কমবে।
বাড়ি কেনার ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞরা সব সময় বলে থাকেন, বার্ষিক আয়ের তিন ভাগের এক ভাগ মর্টগেজ হিসেবে ব্যয় করার। কেউ আবার মাসিক আয়ের শতকরা ২৮ শতাংশ মর্টগেজে প্রদান করা বুদ্ধিমানের কাজ বলে মনে করেন। উভয় হিসাব অনুযায়ী মর্টগেজ প্রদান করার সক্ষমতা নিজেই নির্ধারণ করতে পারেন, সে অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।
একটু অঙ্ক কষে দেখা যেতে পারে, ২ লাখ ৫০ হাজার ডলার মূল্যের একটি বাড়ি শতকরা ২ দশমিক ৭৮ হারে ৩০ বছরে স্থায়ী সুদে মাসিক আনুমানিক ১ হাজার ২৫ ডলার করে কিস্তি পরিশোধ করে সর্বমোট ১ লাখ ১৮ হাজার ৮৪৯ ডলার সুদ প্রদান করতে হবে। অন্যদিক বাড়ির দাম কমে গেলে সুদের হার বেড়ে যাবে। দেখা যাবে, একই বাড়ি ২ লাখ ২৫ হাজার ডলার মূল্যে কিনে শতকরা ৩ দশমিক ৮৮ শতাংশ হারে ৩০ বছরে স্থায়ী সুদে মাসিক ১ হাজার ৫৮ ডলার করে সর্বমোট ১ লাখ ৫৬ হাজার ১২৪ ডলার সুদ প্রদান করতে হবে। সুতরাং সুদের হার কমার কারণে বাড়ির দাম বেশি হলেও আপনি অদূর ভবিষ্যতে লাভবান হবেন।
অন্যদিকে শুধু সুদের হার কম বলে তড়িঘড়ি করে বাড়ি কেনা ঠিক হবে না। বর্তমানে একটি বাড়ি মার্কেটে আসলে এক মাসেরও কম সময়ে বিক্রি হয়ে যায়। এখন দ্রুত গতিতে আপনাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। ভাইরাসের সংক্রমণের শুরুর সময় থেকেই আমেরিকানরা সরাসরি বাড়ি না দেখে কেনার সিদ্ধান্তে এখনো বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। অধিকাংশ বাড়ি বিক্রেতা কর্তৃক নির্ধারিত দামের চেয়ে অধিক দামে বিক্রি হচ্ছে। এই সুযোগে বিক্রেতারা বাড়ি বিক্রিতে বিভিন্ন শর্ত জুড়ে দিচ্ছেন, যেমন—বাড়ির দাম ব্যাংক কম নির্ধারণ করলেও বাড়ি ক্রয় নগদে করতে হবে; যেখানে যে অবস্থায় আছে, সে অনুযায়ী কিনতে হবে। এতে ভবিষ্যতে বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারেন। সক্ষমতার বাইরে কোনো কিছু করা ঠিক হবে না।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বাড়ি কেনার প্রতিযোগিতায় ভবিষ্যতের সঞ্চয়, ইমারজেন্সি ফান্ড এবং অন্যান্য যেকোনো সম্পদের ব্যবহারের ক্ষেত্রে অধিকতর সতর্ক থাকতে হবে।
চ্যানেল ৭৮৬ এর নিউজ রুম এ যোগাযোগ করতে ই মেইল করুন এই ঠিকানায় [email protected] । আপনার পন্য বা সেবার প্রচারে বিজ্ঞাপন প্রচারের জন্য কল করুন +1 (718) 355-9232 এই নাম্বারে।